পবিত্র কুরআনের ইতিহাস বলতে নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ধারাবাহিকভাবে নাযিলকৃত আয়াত গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করাকে বোঝানো হয়। এটি কয়েক যুগ যাবত ব্যাপ্ত ছিল এবং ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।
মুসলমানদের বিশ্বাস ও ইসলামি গবেষকদের তথ্য মতে, কুরআন নাযিল ৬১০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়, যখন ফেরেশতা জিবরাইল (Arabic: جبريل, Jibrīl or جبرائيل, Jibrāʾīl) মক্কা নগরীর হেরা পর্বতে, সর্ব প্রথম কোরআনের সূরা আলাক্ব এর প্রথম পাঁচটি আয়াত নবী মুহাম্মাদ ﷺ কে পাঠ করান। আর এই ধারাবাহিকতা ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ইন্তেকালের মাধ্যমে শেষ হয়।[১] আমরা আজ যে কোরআন গ্রন্থাকারে দেখতে পাই, সেটি সংকলন করেছেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু(৬৪৪ থেকে ৬৫৬)। তিনি আমিরুল মু'মিনিন বা বিশ্বাসীদের নেতা হিসাবে তার খিলাফতের (ইসলামিক সরকারের) সময় হুুযায়ফা ইবনে ইয়েমেনি (রা:) এর পরামর্শে এ দায়িত্ব পালন করেন। যার জন্য তাকে আজও জামিউল কুরআন বা কুরআন সংকলনকারি বলা হয়। আর পুরো বিশ্বে তার সময়ে লিপিবদ্ধ করা কুরআন প্রচলিত রয়েছে। অধ্যাপক ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড পিটার্স এর ভাষ্যমতে, কুরআন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে, পক্ষপাত এড়াতে অত্যন্ত রক্ষণশীলতা ও সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।[২]
নবী করিম মুহাম্মাদ স. এর সময় কুরআনের আয়াত, সূরা পরিবর্তনের সম্ভাবনা ছিল। আর তাই তিনি সেই সময় কুরআন মুখস্থ করা ও অধ্যয়ন করার পদ্ধতি সাহাবিদের শিক্ষা দিতেন। যদিও সাহাবিগণ কুরআন সংকলন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নবি তাদের অনুমতি দেন নি। কারণ কুরআনের হুকুম বাতিল হতে পারত। তারপরও ইচ্ছা করলে যে কেউ সংকলন করতে পারতেন। তারপর মক্কা ছিল সেই সময়ে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যিক নগরী । কিন্তু অধিকাংশ জনগণ লিখতে পারত না। তা সত্ত্বেওজায়েদ ইবনে সাবিত ও উবাই ইবনে কাব সহ অন্তত ৪৮ জনের নাম পাওয়া যায় যারা কুরআনের আয়াত লিখার দায়িত্বে ছিলেন,যারা কাগজ ছাড়াও খেজুরের ডাল, গাছের পাতা,বাঁশের টুকরা এবং চতুষ্পদ জন্তুর হাড্ডির উপর কোরআন লিখে রাখতেন। এভাবে নবী তত্ত্বাবধানে কোরআনের একটি কপি প্রস্তুত হয়ে যায় যদিও তা পুস্তিকা রূপে বা গ্রন্থিত আকারে ছিল না। তাছাড়াও সাহাবাদের কারো কারো কাছে ব্যক্তিগত ভাবে কোরআনের সম্পূর্ণ বা আংশিক কপি ছিল। যেমন ইবনে ওমর বলেন, নবী কোরআন বা কোরআনের কপি নিয়ে) শত্রু এলাকা ভ্রমণ করতে নিষেধ করেন। (বুখারী খন্ড ১ পৃ ৪১৯)।[২১]:৮৩
অধিকাংশ শিয়া ও সুন্নি আলেমগণের মতে, সম্পূর্ণ কোরআন নবী মুহাম্মাদের মৃত্যুর পূর্বেই সংকলিত হয়েছিল। ইবনে আব্বাস বলেন, "যেটা কুরআনের চূড়ান্ত লিপি সেটি সংরক্ষিত ছিল। কেননা নবি কুরআন তেলাওয়াত করতেন, আর জিব্রাঈল (আ) শুনতেন, আর জিব্র্রাঈল তেলাওয়াত করলে নবি শুনতেন" এটা হত প্রতি রমজান মাসে। আর তার মৃত্যুর পূর্বের রমজান মাসে মুহাম্মাদ দুই বার তিলওয়াত করে শুনান। যা থেকে সাহাবারা বুঝেছিলেন নবী এর মৃত্যু আসন্ন এবং সম্পূর্ণ কোরআন নাজিল সমাপ্তির।"[২৬] আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম,এবং তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলাম ইসলামকে( ৫:৩)। আয়াত দ্বারা কোরআন নাজিলের সমাপ্তি টানা হয়েছে। আবার কিছু সংখ্যক আলেমের মতে, কুরআন নবী জীবিত অবস্থায় অবতীর্ণ ও গ্রন্থকারে সাজানো হয়েছে আর তার কোন পরিবর্তন হয়নি। আর কুরআনের ঐতিহ্যগত আইন দ্বারা প্রকাশ পায়, মুহাম্মাদ ই-কুরআনের চূড়ান্ত ধারক, যেটা তিনি জিব্রাঈল এর কাছ থেকে ধারাবাহিক ভাবে শুনে শুনে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।[২৭]
মুহাম্মদ (স:)বিদায় হজ্জ এর ভাষণে বলেন, আমি তোমাদের জন্য দুইটি ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি; এই দুইটি হল, আল্লাহর কিতাব-ও সুন্নতে রাসূল। একদল আলেম মনে করেন, যেহেতু কিতাব বলতে মুখস্থ কোন কিছু বা বিচ্ছিন্ন ভাবে লিখিত কোন লিখাকে বুঝায় না, তাই নবীর জীবদ্দশায় কোরআন মাজিদ বই আকারে সংকলিত হয়।[২৮] আবার, কিছু সংখ্যক আলেম মনে করেন, কুরআন লিপিবদ্ধ করা হয়েছে কিতাবে (মাকতাবে) যা সংগৃহিত ছিল এবং যা সাহাবিগণ লিখে রেখেছিলেন। কুরআনের সবটুকু তখন ঠিক ছিল তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছিল না। কারণ তখন ওহী অব্যাহত ছিল। কেবল মাত্র নবি (স) এর মুখস্থ করা আয়াতই ছিল সর্বাধিক সত্য।[২৯]
অন্য একদল আলেম (ইসলামি পণ্ডিত) মনে করেন, কুরআন হল সেটা যা মুহাম্মদ নিজে সংরক্ষণ করেছেন এবং তার জীবদ্দশায় যা সংরক্ষণ করেছেন বা করতে বলেছেন তাই। যেমন, জায়েদ ইবনে সাবিত বর্ণনা করেন, "আমরা কুরআন লিপিবদ্ধ করতাম আল্লাহর রাসূলের অনুমতির পর।"[৩০]
আবার অন্য কিছু ব্যক্তি বলেন, মুহাম্মদ জীবিত থাকাকালে এটা সম্ভব ছিল কুরআনের আয়াত যে কোন সময় পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন বা রহিত হওয়ার। সুতরাং ওহী সম্পূর্ণ নাজিলের পূর্বেই তা সংরক্ষণ করা নির্ভুল কিতাব হত না।
#ইসলামিক_ভিডিও #ইসলামিক #নোমান_আলী_খান #akhira #islamic #নোমান_আলী_খান #ইসলামিক #ইসলামিক_ভিডিও #ইসলামিক #নোমান_আলী_খান #নোমান_আলী_খান #islamic #islamic#