আল্লাহ হলেন সাধারণত যার ইবাদত করা হয়, যিনি নির্ভরশীল মা‘বূদ এবং সমস্ত সৃষ্টির উপর ইলাহ ও মা‘বূদ হওয়ার যোগ্য। তিনি ইলাহ হওয়ার সমস্ত গুণাবলীতে গুণান্বিত।[2] আল্লাহ নিজেই বলেছেন, তাঁর মধ্যে উলুহিয়্যাতের সমস্ত গুণাবলী একত্রিত হয়েছে। তিনিই সমস্ত দিক থেকে একমাত্র ইলাহ হওয়ার যোগ্য যা তাকে একমাত্র মা‘বুদ হওয়া আবশ্যক করে, তিনিই একমাত্র প্রশংসা ও শুকরিয়া পাওয়ার অধিকারী, তিনি মহান, মহাপবিত্র, মহাশক্তিধর, মহাসম্মানিত ও মহামর্যাদাবান।[3]
আল্লাহর নামের মধ্যে আসমাউল হুসনার সমস্ত নাম ও সুউচ্চ সিফাত একত্রিত হয়েছে। আল্লাহই অধিক ভালো জ্ঞাত।[4]
আল্লাহ নামটি চিন্তা-গবেষণা করলে দেখা যায়, আল্লাহ নামের মাঝেই ইলাহিয়্যাতের সব অর্থ বিদ্যমান। এ নামটি পরিপূর্ণ সিফাত ও একমাত্র তাঁরই জন্য নির্ধারিত এবং তাঁর কাজে কেউ অংশীদার নেই। কেননা অনুরক্তর (যাকে সবাই ভালোবাসে) মাঝে সমস্ত পূর্ণাঙ্গ গুণাবলী থাকার কারণেই সবাই তাকে ভালোবাসে এবং তাঁর পরিপূর্ণ গুণাবলীর কারণেই তাঁর কাছে নতজানু ও বিনয়ী হয়। পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর কোন গুণই সর্বদিক বিবেচনায় মহান আল্লাহর থেকে বাদ পড়ে না। অথবা তিনি তাদের উপকার করেন, তাদের দেখ-ভাল করেন ও সাহায্য-সহযোগিতা করেন তাই তারা তাঁর দিকে ঝুঁকেন বা তাঁর ইবাদত করেন। ফলে ইবাদতকারীর প্রতি কল্যাণ বর্ষিত হয় এবং তাদের থেকে অকল্যাণ ও ক্ষয়-ক্ষতি প্রতিহত হয়। এ কথা সকলেই অবগত আছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলাই সব কিছুর মালিক। তাঁর সৃষ্টির কেউ নিজের যেমন মালিক নন তেমনি অন্যেরও মালিক নন, তারা নিজের যেমন কোন উপকার বা ক্ষতি সাধন করতে পারে না তেমনি অন্যেরও কোন উপকার বা ক্ষতি সাধন করতে পারে না। এমনিভাবে তারা নিজেদের ও অন্য কারো জীবন, মৃত্যু, পুনরুত্থান কোন কিছুই দিতে পারে না। কারো মনে যখন এ কথা গেঁথে যাবে যে, আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র ইলাহ ও আশ্রয়দাতা তখন বান্দার ভালোবাসা, ভয় ও প্রত্যাশা সবকিছুর তার রবের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যাবে। সবকিছুতেই সে তাঁর কাছে ফিরে যাবে, তিনি ব্যতীত সৃষ্টিকুলের সবকিছু থেকেই চাওয়ার প্রত্যাশা বর্জন করবে, যাদের নিজেদেরই পরিপূর্ণতা নেই, তারা নিজেরা কর্ম সম্পাদনকারী নন। সুউচ্চ ও সুমহান আল্লাহ ব্যতীত কোন শক্তিদাতা ও সাহায্যকারী নেই।[5]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. কে আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে ইসমে আ‘যম তথা সবচেয়ে বড় নামের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো। সবচেয়ে বড় নাম কি আল্লাহর নির্দিষ্ট ও সুপরিচিত না-কি তা অনির্দিষ্ট ও অপরিচিত?
তিনি এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, কিছু লোক মনে করেন যে, আসমাউল হুসনা তথা আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে ইসমে আ‘যম তথা আল্লাহর সর্বাধিক মহান নামটি শুধু তিনি যাদেরকে নির্বাচিত করেন সেসব বিশেষ বান্দাগণ কারামতের মাধ্যমে জানেন, যা সাধারণ নিয়মের বহির্ভূত। মূলত এ ধারণাটি ভুল। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নামসমূহ ও তাঁর সিফাতসমূহ জানার জন্য আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। যারা তাঁর নামসমূহ জানেন, এগুলোর ব্যাপারে গভীর জ্ঞান রাখেন, ইবাদত ও দো‘আয় এসব নামে তাঁকে ডাকেন এবং কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে যারা তাঁর কাছে এসব নামে চায় তাদের তিনি প্রশংসা করেছেন। নি:সন্দেহে আসমাউল হুসনার অগ্রবর্তী নামই আল্লাহর সর্বাধিক মহান নাম (ইসমে আ‘যম)। যেমন আল্লাহ তা‘আলা সর্বময় দানশীল যার বদান্যতা ও দানশীলতা শেষ হওয়ার নয়। তিনি বান্দাকে দান করতে পছন্দ করেন। তাঁর দানের মধ্যে সর্বাধিক দানপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন যাকে তিনি তাঁর আসমাউল হুসনা ও তাঁর সুমহান সিফাতসমূহ জানার ও বুঝার বদান্যতা দান করেছেন। অত:এব, সঠিক কথা হলো আল্লাহর সব নামই সুন্দর এবং সবগুলোই মহান; তবে সর্বাধিক মহান নাম হলো যেসব নাম তাঁর জন্যই একক বা অন্যের সাথে মিলিত হলেও তা তাঁর সত্ত্বাগত যাবতীয় গুণাবলী বা তাঁর কর্মগত যাবতীয় গুণাবলী বা যাবতীয় গুণাবলীর উপর প্রমাণ করে। যেমন, আল্লাহ এমন একটি নামটি ইসমে জামে‘ যার মধ্যে উলুহিয়্যাত তথা ইলাহ হওয়ার যাবতীয় গুণাবলী বিদ্যমান, এ নামটিতে সমস্ত পূর্ণাঙ্গ গুণাবলী একত্রিত হয়েছে। এমনিভাবে আল-হামীদ (মহা প্রশংসিত) ও আল-মাজীদ (মহিমান্বিত, সম্মানিত)। আল-হামীদ এমন একটি নামকে বুঝায় যাতে সকল প্রশংসাকারীদের যাবতীয় প্রশংসা ও আল্লাহর পরিপূর্ণতা একত্রিত হয়েছে। আর মাজীদ বলা হয় যাতে মহান ও উচ্চ-মর্যাদাবান হওয়ার যাবতীয় গুণাবলী একত্রিত হয়েছে। এ নামের কাছাকাছি অর্থের নাম হলো আল-জালীল (মহা মহিয়ান), আল-জামীল (মহা মনোরম), আল-গানী (অমুখাপেক্ষী) এবং আল-কারীম (মহা সম্মানিত)।
যেমন আল-হাইয়্যু (চিরঞ্জীব) ও আল-কাইয়্যূম (চিরন্তন)। আল-হাইয়্যু বলা হয় যার রয়েছে মহাপরিপূর্ণ জীবন যাতে সত্ত্বার (যাতের) যাবতীয় অর্থ বিদ্যমান। আর কাইয়্যূম হলো যিনি নিজে নিজেই প্রতিষ্ঠিত, বিদ্যমান, শ্বাশত, তিনি সব সৃষ্টি থেকে মুখাপেক্ষীহীন এবং সকল সৃষ্টি তিনিই সৃষ্টি করেছেন। এটি এমন একটি নাম যাতে যাবতীয় কর্মের গুণাবলী প্রবিষ্ট হয়েছে।
আল্লাহর আরো অন্য নামের মধ্যে রয়েছে আল-‘আযীম (মহা মর্যাদাপূর্ণ, অতি বিরাট) এবং আল-কাবীর (অতি বৃহৎ, অতি মহান) যাতে তাঁর নামসমূহ ও সিফাতসমূহের যাবতীয় মহত্ব, বড়ত্ব, অহমিকা একত্রিত হয়েছে। তাঁর সকল সৃষ্টির যাবতীয় সম্মান ও মর্যাদা প্রশর্দন একমাত্র তাঁরই জন্য। যেমন তুমি বলো, ‘ইয়া যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম’ (হে মহা মর্যাদাবান, মহা মহত্ত্ব ও মহা সম্মানিত)। কেননা আল-জালাল (মহা মহত্ত্ব) হলো বড়ত্ব, মহত্ত্ব, অহমিকা ও সর্বদিকের পরিপূর্ণতার গুণ। আর ইকরাম (মহা সম্মানিত) হলো বান্দা কর্তৃক তাঁকে মহা সম্মান প্রদর্শন ও তাঁর সম্মুখে সর্বোচ্চ অপমান ও লাঞ্ছনাবোধ বা এরূপ আরো কিছু করা।
অত:এব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, ইসমে আ‘যম (সর্বশ্রেষ্ঠ নাম) হলো ইসমে জিনস (সমষ্টিগত নাম)। শরী‘আতের দলীল ও বুৎপত্তিগত[6] অর্থ এ মতটিই প্রমাণ করে। যেমন সুনানের কিতাবে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দো‘আ করতে শুনলেন। সে বলছিল,