ডাক্তার থেকে মাওলানা হওয়ার গল্প!
আমার বাবা আমাকে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন।সেই সময় ডাক্তারদের অনেক সম্মান ছিল।তাই আমার বাবা বলতেন, "অনেক সম্মান আছে ডাক্তারদের, তোকে ডাক্তার বানাবো।"
সে গ্রামের লোক ছিল, দুটো কথা বলতেন, "অনেক সম্মান, অনেক টাকা।"
আল্লাহ আগেই দিয়ে রেখেছিলেন কিন্তু টাকা উপার্জনের শখ কার নেই?
"আমার ছেলে! তোকে ডাক্তার বানাবো।অনেক সম্মান, অনেক টাকা।"
আমি যখন তিনদিনের জামাতে যাই তখন আমি গভমেন্ট কলেজ লাহোরে পড়তাম।সেন্ট্রাল মডেল থেকে মেট্রিক পরীক্ষা এবং গভমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি।এখন সেটা ইউনিভার্সিটি হয়ে গিয়েছে।তিন দিনের জামাতের জন্য আমার এক বন্ধু আমাকে না বলে নিয়ে যায়।আমি সেই জামাত থেকে থেকে আমি চার মাসের জন্য জামাতে যাই অর্থাৎ তিন ছিল্লায়।চার মাস শেষে এক যুবক বললো, "তুই ডাক্তার হয়ে কি করবি, আলেম হয়ে যা।"
আল্লাহ তার কথা আমার মনের মধ্যে বসিয়ে দিলেন।আমি এই পথে চলে আসি।সেই সময়ে ডাক্তারি অনেক সম্মানের পেশা ছিল এবং মসজিদ-মাদ্রাসার খেদমত সম্মানজনক পেশা ছিল না।আমাদের গ্রাম্য পরিবেশে মৌলবী নিচু জাতের লোকেরা হতেন, যেমন: লোহার, কুমার, ধোপা।যখন আমি বাসায় এসে বললাম, তখন আমার বাবা বললো, "তুই নিচু জাতের লোকেরদের কাজ করবি?
কি খাবি?
বেঁচে থাকতে চাস নাকি না?
পুরো এলাকার জমিদার আমাকে কথা শোনাবে, তোর ছেলে মৌলভী হবে?
২৩ নভেম্বর ১৯৭২, সকাল ৮-৯ টায়।আমার বাবা বাসায় আসলো।জমিদারদের মত লুঙ্গি, পাঞ্জাবী পড়েছিলেন ও পাগড়ী খুলে পাশে রেখলেন।আমাকে দেখে রাগান্বিত হয়ে উচ্চস্বরে বললেন, "তুই মৌলভী হতে চাইলে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।"
আমিতো জানতাম না যে, আল্লাহ আমাকে সেই জায়গায় পৌঁছাবেন যেখানে ডাক্তাররা আমার সামনে বসে কথা শুনবে।আমিতো সেইসময় জানতাম না, কি হবে আমার সাথে?
আমি এভাবেই বেরিয়েছিলাম, "ঠিক আছে, আমি তৈরি।"
আমার বাবার কঠোরতা দেখে, আমার মা আমাকে অন্য জায়গায় নিয়ে বললো, "তুই যা, কিছু হবেনা।আল্লাহ'তায়ালা সাহায্য করবেন।"
২৯০০ রুপি আমাকে দিলেন আমাকে।২৯০০ রুপি সেই সময় অনেক বড় সম্পদ ছিল।২৯০০ রুপি দিয়ে বললেন, "যা আল্লাহর সাহায্য করবেন।"
তো আমি রাইমেন্ড এসে পড়লাম।মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করে দিলাম।৮-৯ বছর সেখানে পড়েছি।দুই বছর পর আমার বাবাও রাজি হয়ে গেলেন মাদ্রাসায় পড়ার বিষয়ে।সেই সময় একজন ডাক্তারের অনেক সম্মান ছিল।আমি হাতজোড় করে বলছি, ডাক্তারদের এখন ব্যবসায়ী মনে হয়।সেও টাকার পিছনে এইভাবে দৌড়াচ্ছে, যেইভাবে মাল রোডের ব্যবসায়ী দৌড়াচ্ছে, যেভাবে ল্যাবটারি মার্কেটের ব্যবসায়ী টাকার পিছনে দৌড়াচ্ছে।সেও এভাবেই দৌড়াচ্ছে।হালাল রোজগার, হালাল কামাই এর বিনিময় নেওয়া নিষিদ্ধতো আর নয়।
হালাল রিজিক!
আমি কানাডা গিয়েছিলাম।প্রায় আমার মাথা ব্যাথা হয়।আমি কানাডায় যাই সেই রোগের চিকিৎসার জন্য পরিচিত ডাক্তার ছিল পাকিস্তানী।পারকেসনের পাঁচজনের বড় ডাক্তারদের মধ্যে উনি একজন।তার ক্লিনিকে আমি বসেছিলাম।কথাবার্তা হতে হতে একটি পেন্সিল পড়েছিল উনার টেবিলে।সে এভাবে পেন্সিলটি উঠিয়ে বললো, "মাওলানা! একটি পেন্সিল আমি যদি কোন কোম্পানির এজেন্ট থেকে নেই তাহলে আমি ব্ল্যাকলিস্ট হয়ে যাব।একটি পেন্সিল আমি যদি কোন কোম্পানির এজেন্ট থেকে নেই তাহলে আমি ব্ল্যাকলিস্ট হয়ে যাব।আমি তারপর আর ক্লিনিক চালাতে পারবো না।"
আপনারা ডাক্তার হন, ব্যবসায়ী হবেন না।আপনারা সেবাদানকারী হন।আল্লাহর কসম! রোগীর দোয়ায় কারণে আল্লাহ আপনার বংশে বরকত দান করবে।আর আপনি যদি শুধু ব্যবসায়ী হন, টাকা আপনি অর্জন করতে পারবেন কিন্তু জানা নেই পরবর্তীতে আপনার বংশের কি হবে?
আর আপনি যদি সেবাদানকারী হন, ডাক্তার হন।রোগীর দোয়া নেন, আপনার বংশ সেই দোয়ার বরকতে বসে বসে খাবে।দুঃখীর দোয়া আল্লাহর আরশ হিলিয়ে দেয়।ব্যথিতদের দোয়ার কারণে ফেরেশতারা কান্না করে।আপনারা সেই ব্যক্তি, যারা ব্যথিত লোকেদের দোয়া প্রতিদিন নিতে পারবেন।আপনি শুধু আজকের দিন অতিবাহিত করতে পারবেন তা নয়, আপনি আপনার সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে পারবেন।দোয়ার শক্তি মৃত্যুর পরও চলতে থাকে।আমি আপনাদের অনেক সময় নিয়ে নিয়েছি।মাফ চাচ্ছি।কোনো কথা খারাপ লাগলে আল্লাহ ওয়াস্তে মাফ করে দিন।
Speech: Maulana Tariq Jamil
Translation: Islamic Anubad
Stay connected with us on social media
Website: https://islamicanubad.blogspot.com/
Facebook: /
Instagram: /
Twitter: / islamicanubad
#islamicanubad #banglasubtitile